যৌন আসক্তির সমস্যা শুধু আধুনিক বা ধনী শ্রেণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। যে কোন মানুষ যৌন আসক্ত হতে পারে। এই রোগটি মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে বেশি হয়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির যৌন আকাঙ্ক্ষা এতটাই তীব্র যে সেগুলি পূরণের জন্য যে কোনও প্রান্তে যেতে পারে। এটি তার ব্যক্তিগত ও সামাজিক কাজেও প্রভাব ফেলে। আসুন জেনে নেই এই রোগের লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসা।
যৌন আসক্তরা তাদের সঙ্গীকে শুধুমাত্র যৌনতার মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে এবং সঙ্গীর প্রতি তাদের কোনো ধরনের মানসিক সংযুক্তি থাকে না। যৌন আসক্তদের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে-
বেশির ভাগ সময়ই সেক্স নিয়ে চিন্তা করেন।
একাধিক যৌন সঙ্গী থাকা।
অতিরিক্ত বৈবাহিক সম্পর্ক থাকা।
অশ্লীল সিনেমা খুব বেশি দেখা।
সাইবার সেক্স এবং ফোন সেক্সে অত্যধিক আগ্রহ দেখানো।
যৌনকর্মীর সাথে যৌন সম্পর্ক করা।
দিনে 10-15 বার হস্তমৈথুন।
যৌনতায় আসক্ত কিছু লোক যৌন হয়রানি অর্থাৎ ধর্ষণও করে।
যৌনতার নামে কাজ, সংসার ও অন্যান্য দায়িত্ব উপেক্ষা করা।
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা থাকলেও সহবাস করা।
কারণ:
যৌন আসক্তির জন্য অনেক কিছু দায়ী হতে পারে, যেমন মানসিক ও মানসিক সমস্যা, শৈশবে পরিবারে যৌন নির্যাতন, ব্যক্তিত্বের ব্যাধি, অকাল যৌনতা, শৈশব ট্রমা, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার এবং টেনশন ইত্যাদি। এ ছাড়া কিছু ওষুধ সেবন করলেও হাইপারসেক্সুয়ালিটির সমস্যা হতে পারে। যাদের বিষন্নতা বা অন্য কোনো মানসিক রোগ আছে তাদের মধ্যেও যৌন আসক্তির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
প্রভাব:
যৌন আসক্তি একজন ব্যক্তির শারীরিক স্বাস্থ্য, মানসিক অবস্থা, সামাজিক অবস্থা এবং এমনকি কার্যকারিতাকেও প্রভাবিত করে। এই ধরনের ব্যক্তিরা তাদের যৌন ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং কাজে মনোনিবেশ করতে অক্ষম। ফলে তাদের যৌক্তিক শক্তিও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ক্রমবর্ধমান মানসিক অস্থিরতার কারণে, এই জাতীয় ব্যক্তির বিষণ্নতায় চলে যাওয়ার বা এমনকি আত্মহত্যার চিন্তাভাবনার সম্ভাবনা রয়েছে।
সেক্স ড্রাইভ নিয়ে আপনার সঙ্গীর সাথে মতবিরোধ হওয়া একটি সাধারণ বিষয়। যৌন আসক্তি তাদের ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি তাদের পেশাগত জীবনকে প্রভাবিত করে। ব্যক্তিগত জীবনে সঙ্গী ও বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি, সমাজ ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, একাধিক যৌন সঙ্গী থাকা এবং পেশাগত জীবনে, কাজে মনোযোগ না দেওয়া, সহকর্মীদের সঙ্গে মতবিরোধ থাকা, সময়মতো অফিসে না পৌঁছানো এসব আছে। সাধারন সমস্যা.
চিকিৎসা:
যৌন আসক্তির মতো গুরুতর সমস্যার চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন। এটি এক ধরনের মানসিক রোগ, যা শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে চিকিত্সা করা উচিত। যৌন আসক্তদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ধরনের থেরাপি পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল টুয়েলভ স্টেপ প্রোগ্রাম, ফিজিওথেরাপি এবং সাপোর্ট গ্রুপ। এই ধরনের চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হল ব্যক্তিকে যৌন মিলন থেকে বিরত রাখা নয়, বরং তাকে সঙ্গীর সম্মতি ও সম্মতিতে একটি সুস্থ সম্পর্ক ও যৌন মিলনে উদ্বুদ্ধ করা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যৌন আসক্ত ব্যক্তির সঙ্গীরও কাউন্সেলিং করা উচিত। চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াও জরুরি। কারণ যৌন আসক্তদেরও অনেক ধরনের মানসিক রোগ যেমন বিষণ্নতা, সিজোফ্রেনিয়া ইত্যাদির ঝুঁকি থাকে।