এক দশকেরও বেশি আগে তাকে খুন করা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেপ্তারের পরিপ্রেক্ষিতে সুতিয়ার প্রতিবাদী এবং শিয়ালদহ মিত্র ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন শিক্ষক বরুণ বিশ্বাস শুক্রবার হঠাৎ করেই প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন। 2012 সালের জুলাই মাসে বরুণকে খুন করা হয়। ওই ঘটনায় জ্যোতিপ্রিয়াকে অভিযুক্ত করেছিলেন বরুণের বাবা ও দাদা। বৃহস্পতিবার আরেকটি মামলায় গ্রেফতার করা হয় জ্যোতিপ্রিয়কে। এমন পরিস্থিতিতে ফের দোষের আঙুল তোলা হচ্ছে বরুণের দাদা ও বাবার দিকে। তাদের একমাত্র আশা এবার বরুণের অন্যায় মৃত্যুর বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
5 জুলাই 2012. এবং ঠিক পাঁচ দিন আগে, বরুণ উত্তর 24 পরগণার গোবরডাঙ্গা স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমেছিলেন। প্ল্যাটফর্ম থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে স্টেশন চত্বরে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। 2000 সালে গাইঘাটার সুতিয়ায় বেশ কয়েকজন নারী গণধর্ষণের শিকার হন। সেই ঘটনার বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ মঞ্চ তৈরি করেছিলেন বরুণ। গণধর্ষণ মামলার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ এবং সুশান্ত চৌধুরী নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের তদন্তে জানা গিয়েছে, দমদম সেন্ট্রাল জেলে বসেই বরুণকে খুনের ষড়যন্ত্র করেছিলেন তিনি। সেই থেকে বরুণের পরিবার উত্তর 24 পরগণায় তৃণমূলের ‘শেষ কথা’ বলা জ্যোতিপ্রিয়ার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে। এখন জ্যোতিপ্রিয়াকে গ্রেফতার করায় মুখ খুলছে বরুণের পরিবার। তবে কণ্ঠে সন্দেহ আছে।
বরুণের দাদা অসিত বিশ্বাস শুক্রবার আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, কতদিনের জন্য এই গ্রেপ্তার? স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নেই। তদন্তকারী সংস্থা কীভাবে তদন্ত পরিচালনা করবে তার ওপর নির্ভর করতে হবে আদালতকে। সমস্যা তদন্ত নিয়ে। এটা কি প্রহসন নয়? বিচারের অপেক্ষায় বসে আছি।” জ্যোতিপ্রিয়ার গ্রেপ্তারের ঘটনাও সামনে এসেছে। তিনি বলেন, “যে একসময় উত্তর চব্বিশ পরগনা শাসন করতেন, আজ তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তখনই একটু সাহস পেলাম। সেই সাহস নিয়েই বলছি। আমাদের কোনো সন্দেহ নেই যে বরুণের চলে যাওয়ার পেছনে তিনি ছিলেন। বরুণও মন্ত্রীর মোবাইল ফোন থেকে ফোন পান। প্রতিদিনই হুমকি আসত। বসতে বলা হলো। কিন্তু ভাই কখনো পাত্তা দেননি। বালু (জ্যোতিপ্রিয়ার ওরফে)ও বরুণকে নানাভাবে হয়রানির চেষ্টা করেছে।
প্রসঙ্গত, বরুণের পরিবার তার মৃত্যুর জন্য জ্যোতিপ্রিয়াকে দায়ী করেছিল। তবে ওই বালুর গ্রেফতারে স্বস্তি পেতে পারেননি বরুণের বাবা ও দাদা। তবে অসিতের দাবি, ভয় কাটিয়ে এবার তিনি খোলামেলা কথা বলার সাহস পেয়েছেন। আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে তিনি দাবি করেন, জ্যোতিপ্রিয়ার প্রভাবে বরুণ হত্যার তদন্তে এক বিন্দুও অগ্রগতি হয়নি। তিনি বলেছেন, “গ্রেফতারে স্বস্তির কোনো কারণ নেই।” সত্যিকারের ন্যায়বিচার থাকলেই বিচার হবে। অপরাধীর অপরাধের শাস্তি না হলে স্বস্তি কী?” জ্যোপরি গ্রেপ্তারের পর তাঁর আবেদন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যায়। তিনি বলেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সততার প্রতীক। তাঁর ভাইয়ের মৃত্যুর তদন্তের দায়িত্ব এ বার সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে। তাহলেই সত্য বেরিয়ে আসবে। জ্যোতিপ্রিয়ার ভূমিকাও দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
অসিত দাবি করেছেন যে 2011 সাল নাগাদ বরুণ পরিবর্তনের স্লোগানে যোগ দিয়েছিলেন। অসিত আক্ষেপ করে বলেন, “বরুণ পরিবর্তনের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু এক সৈনিকের (জ্যোতিপ্রিয়া) ষড়যন্ত্রের কারণে বরুণকে চলে যেতে হয়। তারা আমার মাকেও হত্যা করেছে। বিচারের অপেক্ষায় আছি।আরেকটি মামলায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। এ থেকে স্বস্তি না পেলেও একটু আশার আলো দেখার চেষ্টা করছেন তারা। তিনি আশা করছেন এবার তার ভাই হত্যার তদন্ত ত্বরান্বিত হবে। অভিযুক্তদের ভূমিকা জানা যাবে।
Read More : Suvendu Adhikari : ইডি-র হাতে গ্রেফতার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অভিযোগ করেছেন, এটি ছিল ‘শুভেন্দুর ষড়যন্ত্র’