হিন্দু শাস্ত্রে কার্তিক মাস অত্যন্ত শুভ। এই মাসটিকে জপ, তপ, ব্রত, সাধনার মাস মনে করা হয়। এই মাসে ঈশ্বর ভক্তি ও পূজার্চনা করলে সমস্ত ইচ্ছা পূর্ণ হয়। পুরাণ অনুযায়ী বিষ্ণু এই মাসে নারায়ণ রূপে জলে বাস করেন। এ কারণে কার্তিক কৃষ্ণ প্রতিপদ তিথি থেকে কার্তিক পূর্ণিমা পর্যন্ত প্রতিদিন সূর্যোদয়ের আগে নদী বা পুকুরে স্নান করে অক্ষয় পুণ্য লাভ করা যায়। শাস্ত্র অনুযায়ী যে ব্যক্তি কার্তিক মাসে প্রতিদিন গীতা পাঠ করে তাঁরা অনন্ত পুণ্য অর্জন করে থাকে। এই মাসে গীতার একটি অধ্যায় পাঠ করলে ব্যক্তি ঘোর নরক থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে। স্কন্দ পুরাণ অনুযায়ী এই মাসে অন্ন দান করলে পাপ নাশ হয়।
এই মাসে নরকাসুর বধ করেন কার্তিক
পুরাণ অনুযায়ী এই মাসে নরকাসুর বধ করেছিলেন কার্তিকেয়। কুমার কার্তিকেয়র পরাক্রমকে সম্মানিত করার জন্য তাঁর নামে এই মাসের নামকরণ করা হয়।
মৎস্য রূপে সমুদ্র থেকে বেদ উদ্ধার করেন বিষ্ণু
আর এক পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী শঙ্খাসুর নামে এক অসুর ব্রহ্মার কাছ থেকে বেদ চুরি করে পালাচ্ছিল। তখনই তার হাত থেকে বেদ সমুদ্রে পড়ে যায়। দেবতাদের প্রার্থনায় প্রসন্ন হয়ে বিষ্ণু মৎস্য রূপ ধারণ করে সমুদ্র থেকে বেদ উদ্ধার করে আনেন। তখন তিনি বলেন যে, এবার থেকে কার্তিক মাসে সমস্ত বেদের সঙ্গে তিনি স্বয়ং জলে বাস করবেন। এই মাসে নিয়মিত স্নান ও পুজো করলে কুবেরের আশীর্বাদ লাভ করা যায়। আবার যাঁরা এ মাসে বিষ্ণুর পুজো করবে, তাঁরা যমলোক বা স্বর্গ লোকের পরিবর্তে বৈকুণ্ঠ ধাম লাভ করবে। জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে ছাড়া পাবে সেই ব্যক্তি।
কার্তিক মাসে ব্রত পালন করে বৈকুণ্ঠ লাভের কাহিনি
কার্তিক মাসের মাহাত্ম্য সম্পর্কে আর একটি কাহিনির উল্লেখ পাওয়া যায়। পৌরাণিক কালে এক গণিকা ছিলেন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু ও তার পরবর্তীকালের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিচার করতে শুরু করেন তিনি। একদা এক ঋষির কাছে গিয়ে মুক্তির উপায় জিগ্যেস করেন তিনি। তাঁকে কার্তিক স্নানের মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানান ঋষি। তার পর গণিকা প্রতিদিন সর্যোদয়ের আগে স্নান করে তীরে প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করে বিষ্ণু ও সূর্যের পুজো করতে শুরু করেন। এই পুণ্য অর্জন করায় কষ্ট ছাড়া তাঁর শরীর থেকে প্রাণ নির্গত হয়। দিব্য বিমানে বসে বৈকুণ্ঠের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
রুক্মিণীর কাহিনি
আবার পদ্মপুরাণ অনুযায়ী পূর্বজন্মে রুক্মিণী গঙ্গাতীরে বসবাসকারী এক বিধবা ব্রাহ্মণী ছিলেন। গঙ্গা স্নান করার পর নিয়মিত তুলসী পুজো ও বিষ্ণুর ধ্যান করতেন তিনি। কার্তিক মাসের শীতের সময়ে গঙ্গায় স্নান করে পুজো করার সময়ে তাঁর শরীর থেকে প্রাণ নির্গত হয়। সেই ব্রাহ্মণীর আত্মার কাছে এত পুণ্য ছিল যে তিনি লক্ষ্মীর সমান স্থান লাভ করেন। এই পুণ্যের প্রভাবে কৃষ্ণের স্ত্রী হন তিনি।
কৃষ্ণ ও সত্যভামার কাহিনি
কার্তিক মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে কৃষ্ণ সত্যভামাকে জানান যে, তিনি পূর্বজন্মে বিষ্ণুর পুজো করতেন। সারাজীবন কার্তিক মাসে সূর্যোদয়ের আগে স্নান করে তুলসী গাছের সামনে প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করতেন। এই পুণ্যের প্রভাবে কৃষ্ণের স্ত্রী হন সত্যভামা।
বিষ্ণুর প্রিয় মাস কার্তিক
সমস্ত মাসের মধ্যে কার্তিক মাস বিষ্ণুর অত্যন্ত প্রিয়। শাস্ত্রে এই মাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কিছু নিয়ম সম্পর্কে জানানো হয়েছে। কার্তিক মাসে কী করবেন ও কী করবেন না, তা বিস্তারিত জানুন এখানে–
কার্তিক মাসের নিয়ম
কার্তিক মাসে সূর্যোদয়ের আগে উঠে নদীতে স্নান করলে সমস্ত পাপ ধুয়ে যায় এবং মোক্ষ লাভের পথ প্রশস্ত হয়।
এই মাসে তুলসী পুজোর বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। তাই প্রতিদিন তুলসীর পুজো করে প্রদীপ জ্বালানো উচিত। তুলসীর পরিক্রমা করবেন।
এই মাসে অন্ন, উলের পোশাক, তিল, দীপদান, আমলকি দান করা অত্যন্ত শুভ। এই উপায় লক্ষ্মীর আশীর্বাদ লাভ করা যায়।
কার্তিক মাসে বিষ্ণুর স্বরূপ শালীগ্রামের পুজো করলে বিশেষ ফল ভোগ করতে পারেন ব্যক্তি।
প্রতিদিন গীতা পাঠ, মন্দির, নদী, তীর্থ স্থানে প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করুন।
কার্তিক মাসে মেঝেতে ঘুমানো শুভ।
কার্তিক মাসে ভুলেও করবেন না এই কাজ
মনে করা হয় কার্তিক মাসে বিষ্ণু জলে বাস করেন, তাই এই মাসে ভুলেও মাছ ও অন্যান্য আমিষ খাবার খেতে নেই।
এই মাসে শরীর, মন সংযমিত রেখে জীবনযাপন করুন।
এ ছাড়াও বিউলি, মুগ, মুসুর, ছোলা, মটর, গোটা সর্ষে খাওয়া নিষিদ্ধ।
কার্তিক মাসে দুপুর বেলা ঘুমাতে নেই।
এই মাসে শরীরে তেল লাগানো নিষিদ্ধ। শুধু মাত্র নরক চতুর্দশীর দিনে শরীরে তেল লাগাবেন।