ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন গুজরাট টাইটান্স ওপেনার শুভমান গিল (129) এর বিস্ফোরক ইনিংসের ভিত্তিতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ 2023 এর কোয়ালিফায়ার-2-এ মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে 62 রানে পরাজিত করেছে। এই জয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো আইপিএলের ফাইনালে উঠেছে হার্দিক পান্ডিয়ার দল। জিটি লিগের তৃতীয় দল হিসেবে টানা দুই মৌসুমের ফাইনালে উঠেছে।
হার্দিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন দলটি এখন 28 মে একই মাঠে এমএস ধোনির নেতৃত্বে সিএসকে-র বিরুদ্ধে ফাইনাল ম্যাচ খেলবে। পান্ডিয়া যদি ধোনিকে হারাতে সক্ষম হন, তাহলে তিনি আইপিএলের ইতিহাসে তৃতীয় দল হিসেবে পরপর শিরোপা জিতবেন।
আহমেদাবাদে টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেয় মুম্বাই। প্রথমে ব্যাট করে গুজরাট 20 ওভারে 2 উইকেটে 233 রান করে। জবাবে 18.2 ওভারে 171 রানে অলআউট হয়ে যায় মুম্বাই।
শুক্রবার আমদাবাদে বিকেল থেকে বৃষ্টি। টসই করা গেল না সন্ধে 7টার সময়। 45 মিনিট পিছিয়ে দেওয়া হয় টস। খেলা শুরু হয় রাত 8টায়। শুভমন এবং ঋদ্ধিমান সাহা ওপেন করতে নেমে প্রথম ছ’ওভারে শেষ ভাবে বড় শট খেলতে পারেননি। শুভমন ইনিংসের মাঝে বলেন, “নতুন বলটা খেলতে একটু সমস্যা হচ্ছিল। তবে দু’ওভার পর থেকেই বল ভাল ভাবে ব্যাটে আসছিল।” সাময়িক অসুবিধা কাটাতে যদিও বেশি সময় নেননি শুভমন। 16 বলে 18 রান করে ঋদ্ধিমান আউট হন। পীযূষ চাওলা গুজরাতের ওপেনিং জুটি ভাঙেন। এর মাঝে শুভমনের ক্যাচ ফেলেন টিম ডেভিড। পীযূষের বলেই স্টাম্পের সুযোগ ফস্কান ঈশান কিশন। দু’বার জীবন ফিরে পাওয়া শুভমন সেই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগালেন। 32 বলে 50 রানে পৌঁছে যান তরুণ ওপেনার। এর পর ঝড় তুললেন তিনি। 50 থেকে 100 রানে পৌঁছাতে নিলেন মাত্র 17টি বল। গত ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেওয়া আকাশ মাধোয়াল এই ম্যাচ ভুলে যেতে চাইবেন। শুভমনের সামনে তাঁকে বার বার অসহায় লাগল। 4 ওভারে 52 রান দিয়ে গেলেন আকাশ। শুভমনের উইকেটটিও তিনি নেন। কিন্তু 60 বলে 129 রান করে ডেভিডের হাতে যখন ক্যাচ দিলেন শুভমন, গুজরাতের স্কোরবোর্ডে তখন 192 রান।
শুভমন যখন 10টি চার এবং সাতটি ছক্কা দিয়ে নিজের ইনিংস সাজাচ্ছেন, উল্টো দিকে সাই সুদর্শন তখন সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন। চাপ মুক্ত ভাবে শুভমনকে স্ট্রাইক দিচ্ছেন, কখনও আবার বোলারের মাথার উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকাচ্ছেন। 31 বলে 43 রান করেন তিনি। 138 রানের জুটি গড়েন শুভমন এবং সুদর্শন।
দর্শনীয় ইনিংস খেলে শুভমন ফেরার পর মুম্বইয়ের লক্ষ্য ছিল বড় রান তোলা। তাই সুদর্শনকে তুলে নিয়ে রশিদ খানকে নামিয়ে দেয় তারা। দু’টি বল খেলা আফগান অধিনায়ক পাঁচ রান করেন। অধিনায়ক হার্দিক করেন 13 বলে 28 রান। তিনি দু’টি ছক্কা এবং দু’টি চার মারেন। 233 রান তোলে গুজরাত। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ের ম্যাচে যা চাও আরও বাড়িয়ে দেয় রোহিতদের।
টস জিতেছিলেন রোহিত। মনে করেছিলেন রানের লক্ষ্য দেখে তাড়া করবেন। নিজেদের হাতে রাখবেন ম্যাচের রাশ। বৃষ্টি পড়ায় সেই সময় তাঁর সিদ্ধান্ত সঠিক মনে হয়েছিল। কিন্তু শুভমনের দাপটে সেই সব আশা ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়। সেই সঙ্গে যোগ হয় ঈশানের চোট। মাঠে সতীর্থ ক্রিস জর্ডনকে বাহবা জানাতে গিয়ে তাঁর কনুইয়ে আঘাত লাগে ঈশানের। সঙ্গে সঙ্গে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান। ব্যাট করতেও নামতে পারেননি। তাঁর জায়গায় মুম্বই নামায় বিষ্ণু বিনোদকে। রোহিতের সঙ্গে ওপেন করতে নামেন ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার নেহাল ওয়াদেরা। তাঁরা কেউই বড় রান করতে পারেননি। এর মাঝে কনুইয়ে চোট লাগে ক্যামেরন গ্রিনের। তিনি প্রথমে উঠে গেলেও পরে আবার ব্যাট করতে নেমেছিলেন। তাতেও বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি।
মুম্বইয়ের হয়ে রান তাড়া করার কাজটা করেন তিলক এবং সূর্যকুমার। তিলক 14 বলে 43 রান করেন। সূর্য করেন 38 বলে 61 রান। জিততে হলে এই দু’জনের এক জনকে শেষ পর্যন্ত থাকতে হত। সেটাই পারলেন না তাঁরা। কখনও রশিদ খান, কখনও জস লিটল মুম্বইয়ের জুটি ভেঙে দিলেন। আর শেষের কাজটা করলেন মোহিত শর্মা। তাঁকে প্রথম দিকে বলই করাননি হার্দিক। ডেথ ওভারের জন্য রেখে দিয়েছিলেন মোহিতকে। সত্যিই মৃত্যু ফাঁদ পাতলেন তিনি।