ওবিসি শ্রেণীভুক্ত কুর্মি সম্প্রদায় তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতির জন্য প্রতিবাদ করছে। সেই আন্দোলনের আগুন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাফেলায় পড়ে। শুক্রবার ঝাড়গ্রাম শহরে ‘নবজোর’ কর্মসূচির ‘রোড শো’ শেষ করে লোধাশুলি হয়ে শালবনি যাচ্ছিল অভিষেকের কনভয়। সেই সময় 5 নম্বর রাজ্য সড়কের দুই পাশে কুর্মি সম্প্রদায়ের কর্মীরা বিক্ষোভ করছিলেন। এরপর এই ঘটনা ঘটে। কনভয়ের শেষ গাড়িতে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী বীরবাহ হাঁসদা। হামলায় তিনিও আহত হয়েছেন বলে জানান মন্ত্রী। অভিষেককে ‘চোর চোর’ স্লোগান দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। এর পর তৃণমূল নেতার কনভয় শেষে দাঁড় করানো বীরবাহার গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে মন্ত্রীর গাড়ির সামনের কাচ ভেঙে যায়। দলীয় কর্মীদেরও বাঁশ ও লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তৃণমূলের।
এই ঘটনার পর বীরবাহা বলেন, “আমি নিজেও আদিবাসী সম্প্রদায়ের। কিন্তু এটা কী ধরনের আন্দোলন! আমরাও প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু এটা অসভ্য।” বীরবাহা কুর্দিদের ওপর হামলার জন্য সিপিএম এবং বিজেপিকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ” তৃণমূল কখনই কুড়মিরার আন্দোলনের বিরোধিতা করেনি। তা হলে তৃণমূলের কর্মসূচিতে হামলা করবে কেন? এটা জাতপাতের আন্দোলন হতে পারে না। বিজেপি এবং সিপিএমও এতে জড়িত। নোংরা ছাড়া আর কিছুই নয়।”
এই ঘটনার পর কুর্মি সম্প্রদায়ও পাল্টা জবাব দেয় এবং বলে যে এই ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের আন্দোলন নষ্ট করার ষড়যন্ত্র চলছে। তদন্তেরও দাবি জানান।
ঝাড়গ্রামে কুর্মি আন্দোলনকারীরা তার কনভয়ের বেশ কয়েকটি গাড়িতে হামলা চালায়। এরপর প্রায় ৩ কিলোমিটার হেঁটে লোধাশুলি পৌঁছেন তৃণমূল অভিষেক। সেখানে যাওয়ার পর তিনি আবার গাড়িতে উঠে গাজশিমুল এলাকায় দলীয় কর্মসূচির উদ্দেশে রওনা হন। গাড়িতে বসেই অভিষেক বলেন, ‘পুরো ঘটনার তথ্য মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করা হয়েছে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি পুলিশ প্রশাসনের কাছে পুরো ঘটনার তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
কর্মীদের প্রতি অভিষেকের হুঁশিয়ারি
অভিষেক ঝাড়গ্রামে তাঁর কনভয়ের বেশ কয়েকটি গাড়িতে হামলার বিষয়ে কটূক্তি করেছিলেন। দাবি, কুর্মিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান শুনেছেন তিনি! এ ছাড়া কুর্মিদার একটি সময়সীমাও বেঁধে দেন। তিনি বলেছিলেন যে হামলার পিছনে তিনি ছিলেন কিনা তা স্পষ্ট করতে 48 ঘন্টার মধ্যে একটি সংবাদ সম্মেলন করতে হবে। অন্যথায়, তিনি ধরে নিতেন যে কুর্মীরা তার কাফেলার উপর হামলা করেছে। অভিষেক গাজাশিমুলে নভজোর সম্মেলনে দলীয় কর্মীদের বলেন, “আপনারা কেউ উত্তেজিত হবেন না। যারা করেছে তাদের আমি শনাক্ত করেছি। প্রশাসনও চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেবে। আমি গাড়ি থেকে নেমে বিনয়ের খাতিরে হেঁটেছি। আপনি। খেলা শুরু করেছি, শেষ করব।” এর পরেও তিনি কীভাবে জনসাধারণের মহিলাদের ওপর হামলা করলেন? হতাশা থেকে এসব করা হচ্ছে।
হামলার বিষয়ে কুর্মিদের বক্তব্য
কুর্মি সম্প্রদায়ের নেতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো অভিষেক ব্যানার্জির গাড়িবহরে মন্ত্রী বীরবাহ হাঁসদারের গাড়িতে হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, এই অবরোধ আদিবাসী কুর্মি সামাজিক সংগঠনের নয়। তারা সাংবিধানিক আন্দোলনে বিশ্বাসী, উগ্র আন্দোলনে নয়। কুর্মি আন্দোলনকে বদনাম করার ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে দাবি করেন তিনি। এর সঠিক তদন্ত হওয়া উচিত।
অভিষেকের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় দিলীপ…
বৃহস্পতিবার ‘তৃণমূল নওয়াজ’ অনুষ্ঠানে অভিষেক ঘোষণা করেছিলেন যে বৃহস্পতিবারই তাঁর বাড়ি ঘেরাও করা হলে তিনি বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষকে সাহায্য করবেন। এই ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কুর্মিরা তার কনভয় আক্রমণ করে। সেই প্রসঙ্গে তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, “আমরা এই ধরনের সহিংসতার রাজনীতি পছন্দ করি না। আমি ব্যক্তিগতভাবেও চাই না। তবে বৃহস্পতিবারই অভিষেক ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি আমার বাড়ির ঘেরাও সমর্থন করবেন। আজ তারা নিজেরাই। উসকানির পরিণতি কী হতে পারে তা বুঝতে হবে।
কনভয় হামলার বিষয়ে কুনাল
অভিষেকের গাড়িবহরে হামলা প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষ টুইটারে লিখেছেন, ‘ভয় নিয়ে নভজোয়ার যাত্রা ব্যাহত করার অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল। বিজেপির পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে বীরবাহার মতো জঙ্গল মেয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। শ্রমিকরা সহনশীলতা, সংযম, শৃঙ্খলা দেখাচ্ছে।