আগামী বৃহস্পতিবার রামনবমী। ওই দিন রাজ্যের অন্তত 20টি জায়গায় মিছিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে গেরুয়া শিবির। যদিও রাজ্যে রাম নবমীতে মিছিল বের করা প্রধান সংগঠন ‘হিন্দু জাগরণ মঞ্চ’ সমাবেশের তারিখ ঘোষণা করতে চায় না। পূর্বঘোষিত কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদে সেদিন কলকাতার রাস্তায় বসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার ও বৃহস্পতিবারও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তাদের ধর্মঘট চলবে। কাকতালীয়ভাবে, বুধবার মমতার ধর্নার সঙ্গে শহীদ মিনার ময়দানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমাবেশও রয়েছে।
ঘটনাচক্রে, মমতার একটি পুরানো 2018 মন্তব্যকে ‘উপকরণ’ করা হচ্ছে এবং রাম নবমীতে বিভিন্ন জায়গায় সশস্ত্র মিছিল তৈরি করা হচ্ছে। হিন্দু জাগরণ মঞ্চের রাজ্য মুখপাত্র পারিজাত চক্রবর্তীর কথায়, “2018 সালে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যে যেখানেই রাম নবমীর দিনে সশস্ত্র মিছিলের প্রথা আছে, সেখানেই হবে। এভাবেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। নতুন জায়গা হবে না।
তথ্য অনুসারে, 2018 সালে অনুষ্ঠিত শেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বীরভূমের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “যে কাজগুলি দীর্ঘকাল ধরে ঐতিহ্যগতভাবে করা হচ্ছে, সেগুলি ছাড়া হতে দেওয়া হবে না”। . তবে অস্ত্র না তুলে শান্তিপূর্ণভাবে। কোনো সহিংসতা হবে না।” আরেকটি পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রীর পুরনো মন্তব্য জাফরান শিবিরের ‘অস্ত্র’।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন যে মিছিলটি শান্তিপূর্ণভাবে বের করা যেতে পারে। কোনো অস্ত্র হাতে না নিয়ে। ‘সহিংসতা’ চলবে না। কিন্তু রাম নবমীতে গেরুয়া শিবিরের মিছিলের প্রস্তুতি কঠোরভাবে ‘অস্ট্রামিচিলি’র জন্য। ‘হিংসা’ হবে কি হবে না তা বলা যাবে না, তবে ‘উদ্দীপনা’ থাকবে তা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়। অস্ত্র হাতে মিছিল হবে।
তবে কুচকাওয়াজের যাবতীয় প্রস্তুতি ‘প্রথাগত’ কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এমতাবস্থায় পুলিশ প্রশাসন অনুমতি দেবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। দ্বিতীয়ত, 2018 এবং এই 2023 সালের রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব আলাদা। তখন বিজেপি রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল ছিল না। তারা কেবল দলে বিদ্যমান ছিল। কিন্তু এখন তারাই প্রধান বিরোধী দল। ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল পর্যায়ে অনেকটাই পিছিয়ে থাকলেও তাদের উপস্থিতি একেবারেই উপেক্ষা করা উচিত নয়। জনপ্রতিনিধিত্বের দিক থেকে তারা ঐতিহ্যবাহী বিরোধী দল কংগ্রেস ও সিপিএমের থেকে বেশ কয়েক বছর এগিয়ে। এখনও পর্যন্ত বিধানসভা বা লোকসভায় সিপিএমের কোনো প্রতিনিধি নেই। কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র একজন বিধায়ক। সংসদ সদস্যের সংখ্যাও একই। এই কারণেই প্রস্তাবিত রাম নবমীর সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজ্য প্রশাসন ও শাসক তৃণমূলের সঙ্গে জাফরান শিবিরের তুমুল দ্বন্দ্ব হতে পারে।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদও প্রতি বছর রাম নবমীতে রাজ্যজুড়ে শোভাযাত্রা, শোভাযাত্রার আয়োজন করে। এবারও রাজ্যের প্রায় 900টি এলাকায় মিছিল বা অন্যান্য কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছে পরিষদ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সঙ্ঘ পরিবারের আরেকটি সংগঠন হিন্দু জাগরণ মঞ্চ সেই উপলক্ষে পরিষদ ও ‘অস্ট্রামিচিল’-এর চেয়েও বেশি বাংলায় রাম নবমী উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এক সময় বিজেপির বর্তমান সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ দায়িত্বে ছিলেন।
জাগরণ মঞ্চের প্রস্তুতিতে রামের নামে মিছিলে অস্ত্র ব্যবহারের স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। জানা যায়, রাজ্যের মোট ২০টি জায়গায় অস্ত্র নিয়ে মিছিল করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে হুগলি জেলার চন্দননগর, ভদ্রেশ্বর, বীরভূমের সিউরি, পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর, উত্তর 24 পরগণার ভাটপাড়ার মতো এলাকা। পারিজাত সেই প্রস্তুতি সম্পর্কে বলেন, “আমাদের প্রস্তুতি চলছে। আমরা সংগঠিতভাবে অন্তত ৩০ লাখ মানুষকে রাস্তায় নামব। আরও বেশি মানুষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে যোগ দেবে। ৫ শতাধিক স্থানে শোভাযাত্রা হবে। ঐতিহ্যবাহী পরিবেশ থাকবে। পাশাপাশি মিছিল, সেখানেও একই ঘটনা ঘটবে। বাকি জায়গায় বাইক মিছিল বা মিছিল হবে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য আলাদা কোনো পরিকল্পনা আছে কি? পারিজাত বলেন, ‘বিশেষ প্রস্তুতি নেই। কিন্তু যারা জাফরান পতাকা সামনে রেখে হিন্দুত্বের কথা বলেন তারা সুবিধা পাবেন। বিজেপি যদি এর জন্য ভোট পায়, তবে কারও কিছু বলার নেই।” রাজ্যের অস্ত্র মিছিলের অন্যতম সংগঠক দিলীপ অতীতে বলেছিলেন, “হিন্দুরা শক্তির পূজারী। সকল দেবতার হাতে অস্ত্র আছে। ভগবান রামও একজন যোদ্ধা ছিলেন। রামের নামে মিছিলে অস্ত্র না থাকলে কি লাড্ডু থাকবে?” এবার তেমন আগ্রাসী না হলেও আনন্দবাজার অনলাইনকে দিলীপ বলেন, “যেখানে মিছিল হবে, সেখানেই হবে। প্রতি বছর রাম নবমী খড়্গপুরে মহা আড়ম্বর সহকারে পালিত হয়। এবারও হবে। আমি হব।” তবে ভোটের পরিসংখ্যান থেকে বিজেপি লাভবান হবে কিনা সে বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেননি। দিলীপ বলেন, “রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই চাপে রয়েছে। যেভাবে চাকরি বিক্রি হচ্ছে তাতে কেউ তৃণমূলকে ভোট দেবে না। এই এক নম্বর ক্রঞ্চ করার প্রয়োজন নেই.
বিজেপি ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে যে এবার তাদের নেতা-কর্মীরাও রাম নবমীর মিছিলে অংশ নেবেন। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দলের তরফে কোনও কর্মসূচির আয়োজন না করা হলেও, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন রাজ্য জুড়ে এক হাজারেরও বেশি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।” এতে অংশ নেবেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা।পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে আগে হিন্দু ভোট এককাট্টা করার এই লক্ষ্য নিয়ে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘যাঁদের মোদীর ছবি দিয়ে কিংবা রাজ্যের নেতাদের ছবি দিয়ে কাজ হয় না, তাঁরা তো ভগবানের ছবি নিয়ে পথে নামবেই। কিন্তু আমরা পুজো করি ভগবানের। যে যাঁর মতো ঈশ্বরের পুজো করি, ভোটের রাস্তায় নামাই না।’’