লকেট চট্টোপাধ্যায় কি আজ বিজেপিকে নিয়ে যাবেন চিন্তা সভায়? তাকে কি আদৌ সে সুযোগ দেওয়া হবে? দলীয় বৈঠকের আগে এমন বেশ কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কারণ, লকেটকে কথা বলতে না দিতে দিল্লিতে আদালত বসিয়েছে বিরোধীরা। কারণ, তিনি মুখ খুললে বিপাকে পড়বে রাজ্য বিজেপির শাসক শিবির। যারা নির্বাচনের পর থেকে সবকিছুতেই তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলেছেন।
দলটি সন্ত্রাসের যুক্তি দিয়ে ভাঙা সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে। এতে নিচতলায় অধিকাংশ নেতা-কর্মী ক্ষুব্ধ। বুথগুলোতে দলের কোনো সদস্য নেই। অমিতাভ চক্রবর্তী ও তার দল সেই ছবি কভার করতে চায়। দলের সাংগঠনিক অবস্থা ভালো বলে শুভেন্দু কর্মকর্তারা বারবার দিল্লিতে ভুল রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন। তাই আজ লকেট চট্টোপাধ্যায় যখন বৈঠকে মুখ খুলবেন, দলের কঙ্কালসারী চেহারা তুলে ধরার পাশাপাশি দোষ কোথায়, সেটাও সামনে আনবেন। দলের বর্তমান অনভিজ্ঞ এবং তৎকালীন বিজেপিকে মোকাবেলা করা যে সম্ভব নয়, তা স্পষ্ট করে দিতে চান লকেট। আজ এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তিনি স্পষ্ট করে দিতে চান যে তিনি দল থেকে বাদ পড়া মূল ও অভিজ্ঞ নেতাদের পক্ষে। আর তাই হুগলির সাংসদকে আজ কোনোভাবেই মুখ খুলতে বাধা দিতে চাইছে টিম অমিতাভ। এটা দলের ভেতরের গল্প।
এদিকে আত্মদর্শন নিয়ে শুক্রবার লকেট চ্যাটার্জির মন্তব্য দলে ঝড় তুলেছে। “আমাদের আত্মদর্শন করা দরকার,” লকেট বলেছিলেন। যে হারে নেওয়া হয়েছে তা মাথা পেতে নিতে হবে। সমস্ত বিজেপি কর্মী এবং আমাদের আত্মদর্শন করতে হবে। ভুলগুলো সংশোধন করতে হবে। দোষ বা দায় একে অপরের উপর চাপানো উচিত নয়। দেখতে হবে প্রতিষ্ঠানের ঘাটতিগুলো কোথায়। ” হুগলিতে দলের হতাশাজনক ফলাফল সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য যারা দায়িত্বে ছিলেন তারাই বলতে পারেন। দলের বিদ্রোহ নিয়ে মুখ খুললেন হুগলির সাংসদও। তিনি বলেন, “দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি সবার সঙ্গে কথা বলব। কে বিদ্রোহী এসব নিয়ে ভাবছে না। সবাই আমার কাছে দলের কর্মী ও নেতা। “
তখনকার ও নতুন বিজেপি এবং আসল বিজেপির মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে। দলের মূল নেতা ছাড়াও নতুন ও তৎকালীন কিছু নেতা রাষ্ট্রীয় দলের ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছেন। সেই সময়ে লকেট চ্যাটার্জির এই বক্তব্যকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি তার পরামর্শ, সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে। পুরনো ও নতুনকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। লকেটের কথায়, দলের নেতারা যখন হারের কারণ হিসেবে সন্ত্রাসবাদকে জায়েজ করার চেষ্টা করছিলেন তখন কী ভুল হয়েছে তা দেখতে হবে। জনগণকে বিশ্বাসযোগ্যতার জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হবে। লকেট আজ সকলকে যে বার্তা দিয়েছেন তাতে খুশি বিজেপির একটা বড় অংশ। সেই অংশ অনুযায়ী, দলের নেতা হিসেবে লকেট সঠিক কথাই বলেছেন। রাজ্য বিজেপির বিদ্রোহী শিবির মনে করছে, বর্তমান নেতারা, যারা ক্ষমতা দখল করতে চায়, তাদেরও এ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
Read More :
এদিকে দলের অন্দরে প্রশ্ন, আজকের সাংগঠনিক বৈঠকে কতটা আত্মদর্শন হতে দেওয়া হবে? পুরসভায় হারের দায় কার, সেই অপ্রীতিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চাইবেন আজ অমিতাভ? জেলা সভাপতি, বিধায়ক, সাংসদ এবং জেলা পর্যবেক্ষকদের কি ভুল নিয়ে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হবে? যা গত একুশে বিধানসভা নির্বাচন (WB বিধানসভা নির্বাচন 2021) এবং তারপর একাধিক উপ-নির্বাচনের পরে হয়েছিল। ব্যর্থতার কারণ নিয়ে দলীয় সভায় কেউ অপ্রীতিকর প্রশ্ন করলেই তাকে থামানো হয়। আজকের বৈঠকে বিক্ষুব্ধ শিবিরকে কি আদৌ কথা বলতে দেওয়া হবে? আজ দুপুর ২টা থেকে জাতীয় গ্রন্থাগারে বিজেপির চিন্তা সভা শুরু হবে। রাজ্যের পদাধিকারীদের পাশাপাশি দলের বিধায়ক-এমপি, জেলা সভাপতি ও জোন ইনচার্জদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মধ্যাহ্নভোজের পর বৈঠক শুরু হবে। প্রধানত সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বিজয়ী প্রার্থীরাও থাকবেন। সুকান্ত আরও বলেন, বর্ধিত রাজ্য কমিটির তালিকা দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে।